নিজস্ব প্রতিবেদক:
আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর একের পর এক বেড়িয়ে আসছে থলের বিড়াল। দূর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত পিয়ন থেকে আমলা, ব্যবসায়ী থেকে জনপ্রতিনিধি সবার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিশ্রী মুখ বেড়িয়ে আসছে অনুসন্ধানে। ভয়ে, শংকায় যারা মুখ খুলতো না তারাও এখন এগিয়ে এসেছে।
সম্প্রতি সাবেক এমপিদের আমলনামা খুঁজতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে নানা তথ্য। সরকারি চাকুরীজীবী স্বামীর ঘুষের টাকাকে বৈধতা দিতে স্ত্রীর নামে বেনামে ব্যবসা আর টাকার প্রভাবে এমপি হয়ে যাওয়ার রহস্যের জট বেড়িয়ে আসতেই সামনে আসে ঐ এমপি ও তার পরিবারের আসল চেহারা। নরসিংদীর পলাশের মেয়ে, রাজবাড়ির পুত্র বধু সাবেক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ইন্জিনিয়ার মাসুদা সিদ্দিক রোজীর বিরুদ্ধে উঠে এসেছে ডজন খানেক অভিযোগ।
পেশায় প্রকৌশলী সাবেক এমপি রোজী’র স্বামী এম এম সিদ্দিক ছিলেন পিডিবি’র প্রধান। কথিত আছে সেখান থেকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত টাকার জোড়েই স্বামী-স্ত্রী মিলে বনে যান ‘রাজনৈতিক যুগল’। স্বামী নিজেকে পরিচয় দেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হিসেবে। টাকার জোড়ে স্ত্রী হয়ে গেছেন নারী উদ্যোক্তা। আওয়ামীলীগ সরকারের সুবিধা নিতে নরসিংদী ২ পলাশে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জেলাজুড়ে পোস্টার ব্যানার সাটিয়ে হয়ে যান আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেত্রী । এক সময় ‘রিহ্যাব’র পরিচালক ইন্জিনিয়ার রোজী নিজের প্রভাব দেখাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে থাকা নিজের ছবিকে ব্যবহার করেছেন বলেও কথা উঠেছে।
আওয়ামীলীগ নেতা আমির হোসেন আমুকে ম্যানেজ করে স্বামী স্ত্রী মিলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে নিয়মিত দেখা করতে যেতেন। রাজবাড়ীর তৎকালীন ডিসিকে নিজেদের টাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও সাবেক এমপি মমতাজকে তদবিরের উপহার হিসেবে দিয়েছেন বলেও বিশ্বস্ত সূর্ত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে স্বামী পিডিবি’র চিফ থাকাকালে রোজী হয়ে উঠেছিলেন ‘ম্যানেজম্যান’। তখন টাকার বিনিময়ে পিডিবি’তে চলতো যেকোনো অনিয়ম। টাকাই যাদের কাছে সব তারা টাকার ব্যবহার করেছিলেন সব জায়গাতেই। সূর্ত্র নিশ্চিত করেছে সাবেক এমপি রোজীর স্বামী এম এম সিদ্দিক পিডিবি’র চিফও হয়ে ছিলেন আমির হোসেন আমুর হস্তক্ষেপেই। সেখানেও উপঢৌকন হিসেবে কাজে লেগেছে সকল অনিয়মের মহাঔষুধ ‘টাকা’।
সাবেকএমপি রোজীর নিকুন্জ বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র আতিকের। সাবেক এমপি রোজী র প্রতিবেশী যুবলীগ নেতা ইন্জিনিয়ার জাহান সহ তাদের একটা দখলবাজীর টীম রয়েছে বলে জানা গেছে । এরা আবার যুবলীগ নেতা নিখিলেরও সঙ্গী। ইন্জি: রোজী সাবেক প্রধানমন্ত্রী র সঙ্গে গণভবনের ছবি দেখিয়ে ই সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এবং এদের ও বিভিন্ন তদবির ও ঠিকাদারি কাজের সহায়তা করতেন। এই বাহিনীর নিয়ন্ত্রক হয়ে তিনিই হয়ে উঠেন ‘মাফিয়া’।
নিজ জেলা নরসিংদীতে উইমেন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট, বিভিন্ন সামাজিক,সাংস্কৃতিক সংগঠনে নানা সময় অনুদান দিয়ে পেতে চেয়েছিলেন ‘দানবীর, সমাজকর্মীর তকমা’। ঢাকায় মহিলা আওয়ামীলীগের বড় ডোনার হওয়ায় সাবেক এমপি চুমকীর সাথে ছিল ভীষণ রকম সখ্য। এসব রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজের বিজনেস ‘রাসা কন্সট্রাকশন’কে করে তুলেছিলেন অপ্রতিরোধ্য হিসেবে।
রাসা কনস্ট্রাকশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামীয় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে নিকুঞ্জ -২ এ। আর ঢাকা,গাজীপুর,মানিকগন্জ, নারায়ণগন্জ, রাজবাড়ী, ভাঙ্গা, বরিশাল, পটুয়াখালী সহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তাদের অবৈধ সম্পদ-স্থাপনা।
এই দূর্নীতি নিয়ে পড়ে ছিলেন দুদকের জালেও।
সাবেক এমপি রোজী দম্পতি আয় বহির্ভূত সম্পদের কারনে গত কয়েক বছর ধরে ই গোয়েন্দা নজরদারি তে রয়েছেন । কিন্তু অদৃশ্য কারনে দুদক এবং প্রশাসন এ বিষয়ে এগোয়নি। খোজ নিয়ে জানা গেছে পেশীশক্তির জোড়ে দুদকের মামলা থাকা স্বত্বেও দ্বাদশ সংসদে অবৈধ সরকারের অবৈধ এমপি হয়ে নিজের উচ্চাভিলাষের ষোলকলা পূর্ণ করেন তিনি।
গত কয়েক বছরে দেশ থেকে রোজী তারই আপন ভাই জাপানের পাসপোর্টধারী ড: মইনুল এর মাধ্যমে টাকা পাচার করেছে জাপানে এবং কানাডায়। কানাডায় বাড়ি করেছেন এই দম্পতি। সেখানে সব সম্পদ রোজী র ভাইবোন এবং বিশেষ করে মইনুলের নামে করেছেন। ড.মইনুল ভূঁইয়া (TZ1077610
Passport number -জাপান পাসপোর্ট) বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। কিন্তু তিনি পরিবার সহ বেশ কয়েক বছর ধরে কানাডায় ই থাকেন। রোজী দম্পতির সম্পদ বেশিরভাগ রোজীর সহোদর মইনুলের নামেই রয়েছে। রোজীর অন্য ভাইবোনের নামে ও রয়েছে। তবে সকল অপকর্মের সঙ্গী বা ক্রাইম পার্টনার হলো ড.মইনুল। এই মইনুলের নামেও রয়েছে পৃথক আমলনামা ।
রোজী দম্পতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে খুশি করতে ছাত্র আন্দোলনের সময় উত্তরা ট্রাজেডির দিন ডিবি হারুনের সহযোগিতায় রাস্তায় নামিয়েছিলেন সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। মইনুল এবং রোজীর অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনীর নেতৃত্ব দেয় আরেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী মানিক; যে ছাত্র আন্দোলনের সময় বিটিভি ভবনে ভাঙচুরে নেতৃত্ব দেন। মানিকের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী। কিন্তু এমপি রোজী র অবৈধ কারখানা রয়েছে ভাটারা থেকে সামনে আহমেদ বাগ। ঐটা মানিকের নামে হলে ও কারখানা টি মূলত রোজী দম্পতির। কারখানার বাইরে সাইনবোর্ডে মদিনা এন্টারপ্রাইজ লেখা রয়েছে । মানিকের কাজ হলো বরিশাল সহ বিভিন্ন স্থান থেকে লেবার বা সন্ত্রাসী কাজে কর্মী সাপ্লাই দেয়া । এরা ই উত্তরা তে গোলাগুলির সময় অস্ত্র হাতে সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলে করেন বলেও জানা গেছে।
আওয়ামীলীগের অনেক নেতা কর্মীই পলাতক থাকলে ও এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রোজী দম্পতি নিকুঞ্জ বাসা তে ই রয়েছেন । টাকার জোড়ে বিএনপির দুই শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে ম্যানেজ করার চেষ্টাও করা হচ্ছে বলে সূর্ত্রের খবর। এই টাকার জোড়েই নাকি সবকিছু ম্যানেজ করবেন তারা।